বিডিনিউজ ১০ রিপোর্ট: ধর্ষণ প্রসঙ্গে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ আজ ধর্ষণের লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে। আইনের শাসনের অভাবে মাদকের বিস্তার এবং মূল্যবোধের অবক্ষয়সহ বিভিন্ন কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন বাড়ছে।’
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন মোকাবিলা করতে হবে উল্লেখ করে সেলিমা বলেন, ‘অনাচারমূলক দুঃশাসনে জবাবদিহিতার অভাবের কারণেই নারী ও শিশু নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যমান গণতন্ত্রশূন্য দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। নব্য ফ্যাসিবাদী শাসনে একদিকে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। আবার অন্যদিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়ায় প্রতিনিয়ত নারী ও শিশুরা দুর্বৃত্তদের লালসার শিকার হচ্ছে।’
সারাদেশে ধর্ষণের ব্যাপকতা তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ পরিণত হয়েছে ধর্ষণের লীলাভূমিতে। বখাটে প্রেমিক, পাড়ার মাস্তান কর্মকর্তা, বাস কন্ডাক্টর, শিক্ষক ও মাদ্রাসার প্রিন্সিপালসহ কিছু বিকৃত মানুষের লালসার শিকার নারী ও শিশুরা। ৯ মাস বয়স থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধা ধর্ষকের লোলুপ দৃষ্টি থেকে কেউ বাদ যাচ্ছে না। এমনকি রেহাই পাচ্ছেন না বাকপ্রতিবন্ধী বা ভবঘুরে পাগলও। রাস্তাঘাট, বাস বা ট্রেন, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, এমনকি পুলিশ স্টেশন কোথাও নারীরা নিরাপদ নয়। স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে নারীকে ধর্ষণ, পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে নির্মম কায়দায় শিশু হত্যা, পাশবিক নির্যাতনের পর নারীকে পুড়িয়ে কয়লা করে দেয়া- এইভাবে নানা অভিনব কায়দায় ধর্ষক লম্পটের হিংস্র থাবা সর্বত্র বিরাজমান।’
বর্তমান সরকারের আমলেই নারী ও শিশু নির্যাতন অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে- এমন অভিযোগ করে সেলিমা বলেন, ‘কারণ অধিকাংশ নির্যাতনকারী সরকারি দলের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই কারণে এই ধরনের জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িত থাকার পরেও তাদের কেউ স্পর্শ করতে পারছে না। এরা আইনের আওতার বাইরে থাকছে।’
নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করার লক্ষ্য নিয়ে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’ নামে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে বিএনপি বলে জানান বিএনপির এই নেত্রী।
এ সময় বেগম সেলিমা রহমান নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও তুলে ধরেন। এ কমিটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো হলো-
১. নারী ও শিশু অধিকার রক্ষার যাবতীয় কার্যক্রমকে শক্তিশালী এবং বেগবান করা।
২. নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
৩. দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশ নারী ও শিশু। এই জনগোষ্ঠীর জীবন সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ। এদের মধ্যে যারা ভিক্টিম হচ্ছেন তাদের আইনগত ও চিকিৎসাগত সহায়তা দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করা।
৪. বিশেষভাবে দুঃস্থ ভিক্টিমদের শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসাসহ সম্ভাব্য আইনগত সহায়তা প্রদান করা।
৫. ভিক্টিম নারী ও শিশুদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখা।
৬. নারীকে নির্যাতন করা অন্যায়- এটি পরিবার থেকে শিশুকে শেখানো।
৭. নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সচেতন যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করা।
৮. যেকোনো গণমাধ্যমে আলাপচারিতা ও পারস্পারিক কথাবার্তায় যাতে নারীবিদ্বেষী বক্তব্য প্রচার না পায় সেক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গড়ে তোলা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরী প্রমুখ।